স্বৈরাচার শাসক কে?
স্বৈরাচার শাসক হলেন এমন একজন ব্যক্তি যিনি কোনো রাষ্ট্র বা সমাজে নিরঙ্কুশ ক্ষমতা প্রয়োগ করে। তিনি সাধারণত গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ক্ষমতায় আসেন না বরং বলপ্রয়োগ, ধর্মীয় বা সামরিক শক্তি ব্যবহার করে ক্ষমতা দখল করেন। স্বৈরাচারী শাসকেরা সাধারণত মানুষের মৌলিক অধিকার কেড়ে নেন, বিরোধীদের নিপীড়ন করেন এবং দেশের সম্পদ নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করেন।
বাংলাদেশে স্বৈরাচার শাসনের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাসে স্বৈরাচার শাসনের একটি কালো অধ্যায় রয়েছে। স্বাধীনতার পর থেকে দেশটি বিভিন্ন সময়ে সামরিক শাসনের অধীনে ছিল। এই সময়গুলোতে জনগণের মৌলিক অধিকার ক্ষুণ্ন হয়েছে, অর্থনীতি ভেঙে পড়েছে এবং দেশের উন্নয়ন কার্যক্রম ব্যাহত হয়েছে।
- জিয়াউর রহমানের শাসনামল: বাংলাদেশের প্রথম সামরিক শাসক ছিলেন জিয়াউর রহমান। ১৯৭৫ সালে শেখ মুজিবুর রহমানের মৃত্যুর পর তিনি ক্ষমতা দখল করেন। তার শাসনামলে দেশে একদলীয় শাসন ব্যবস্থা চালু হয় এবং বিরোধীদের উপর নিপীড়ন চলে।
- হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের শাসনামল: জিয়াউর রহমানের পর হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ ক্ষমতা দখল করেন। তার শাসনামল ছিল বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে দীর্ঘ সামরিক শাসনামল। এরশাদের শাসনামলে দেশে গণতন্ত্রের বিকাশ ব্যাহত হয় এবং দুর্নীতি বেড়ে যায়।
এরশাদকে স্বৈরাচারী শাসক হিসেবে বিবেচনা করা হয় কেন?
- গণতন্ত্রের উপর হামলা: তিনি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া ব্যাহত করে সরকার গঠন করেছিলেন।
- মানবাধিকার লঙ্ঘন: বিরোধী দলীয় কর্মীদের উপর নিপীড়ন, গ্রেপ্তার এবং হত্যা ঘটানো হয়েছিল।
- দুর্নীতি: তার শাসনামলে দুর্নীতি ব্যাপক হারে বেড়ে যায়।
- মিথ্যাচার: তিনি নিজেকে গণতন্ত্রের পক্ষে দাবি করলেও তার কর্মকাণ্ড তার বিপরীত ছিল।
শেখ হাসিনা স্বৈরাচারী শাসক হিসেবে বিবেচনা করা হয় কেন?
- বিরোধী দলের উপর নিপীড়ন: বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের উপর নিপীড়ন, গ্রেপ্তার এবং হত্যার ঘটনা ঘটেছে।
- মিডিয়ার স্বাধীনতা হরণ: মিডিয়াকে নিজের পক্ষে রাখার জন্য চাপ প্রয়োগ করা হয়েছে।
- মানবাধিকার লঙ্ঘন: বিরোধী দলীয় কর্মীদের উপর নিপীড়ন, গ্রেপ্তার এবং হত্যা ঘটানো হয়েছিল।
- দুর্নীতির অভিযোগ: তার শাসনামলে অনেক দুর্নীতির ঘটনা ঘটেছে. এবং হাজার হাজার কোটি টাকা পাচারের অভিযোগ পাওয়া গেছে.
- নির্বাচনে অনিয়ম: নির্বাচনে অনিয়মের মাধ্যমে ক্ষমতা ধরে রাখার চেষ্টা করা হয়েছে এবং তার শাসনামলে আর কোনো গ্রহণযোগ্য জাতীয় নির্বাচন তিনি হতে দেননি।
- মিথ্যাচার: তিনি নিজেকে গণতন্ত্রের পক্ষে দাবি করলেও তার কর্মকাণ্ড তার বিপরীত ছিল।
উল্লেখঃ ছাত্র ও জনতার ২৩ দিনের দেশ কাঁপানো আন্দোলনে পতন হয় শেখ হাসিনার. ০৫ই আগস্ট ২০২৪ তারিখে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের কাছে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগপত্র জমা দেন। এরপর বঙ্গভবন থেকেই হেলিকপ্টারে করে ভারতে পালিয়ে যায়. এবং শেখ হাসিনার পদত্যাগের মধ্য দিয়ে তাঁর টানা সাড়ে ১৫ বছরের স্বৈরাচারি শাসনের অবসান হয়.
আরো পড়ুনঃ
স্বৈরাচার শাসনের প্রভাব
স্বৈরাচার শাসন একটি দেশের সামাজিক, রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক জীবনে বিরূপ প্রভাব ফেলে। এর ফলে দেশের উন্নয়ন কার্যক্রম ব্যাহত হয়, দুর্নীতি বেড়ে যায়, মানুষের মৌলিক অধিকার ক্ষুণ্ন হয় এবং দেশের অস্থিতিশীলতা বৃদ্ধি পায়।
উপসংহার
বাংলাদেশের ইতিহাসে স্বৈরাচার শাসনের কালো অধ্যায় থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে আমাদের গণতন্ত্রকে রক্ষা করতে হবে। স্বৈরাচার শাসন একটি দেশের জন্য মারাত্মক হুমকি। এটি দেশের উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করে এবং জনগণের মৌলিক অধিকার হরণ করে।
দ্রষ্টব্য: এই আর্টিকেলে উল্লেখিত সকল তথ্যই সর্বজনবিদিত এবং বিভিন্ন সূত্র থেকে সংগ্রহ করা।
Disclaimer: এই আর্টিকেলটি একটি নিরপেক্ষ দৃষ্টিভঙ্গি থেকে লেখা হয়েছে। এখানে উল্লেখিত কোনো ব্যক্তি বা দলের প্রতি কোনো ধরনের পক্ষপাতিত্ব করা হয়নি।
আপনি যদি আরও কোনো তথ্য জানতে চান তাহলে আমাকে কমেন্টে জিজ্ঞাসা করতে পারেন।
স্বৈরাচার শাসক এবং বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট: একটি গভীর বিশ্লেষণ ❤️❤️❤️
ReplyDelete